আল জামি'আতুল আরাবিয়া দারুল হিদায়াহ-পোরশা

বাণী

জামিআর সুযোগ্য মুহতামিম ও শাইখুল হাদীস উস্তাযুল আসাতিযা হযরাতুল আল্লাম আব্দুল্লাহ্ শাহ্ চৌধুরী (দা.বা.)এর দু‘আ ও নসীহত
نحمده ونصلى على رسوله الكريم اما بعد

হে আমার আযীয ত্বলাবা!
এতদিন তোমরা চার দেয়ালের বেষ্টনীতে তোমাদের আসাতেযায়ে কেরামের তত্ত¡াবধানে ও নির্দেশনায় নিজ জীবন পরিচালনা করেছ, কিন্তু বর্তমানে তোমরা তোমাদের নিজ অধ্যয়নের প্রথম সিঁড়িতে উপনীত হয়েছ। কাজেই তোমাদেরকে এমনভাবে প্রতিটি ফনের কিতাবগুলোর প্রতি মাহারত ও দক্ষতার সাথে মেহনত করতে হবে যাতে কুরআন ও হাদীসের নিগূঢ় ও নিখুঁত তথ্য উদঘাটন করে নিজে বুঝতে ও অপরকে বুঝাতে সক্ষম হও। তৎসঙ্গে ফেরাকে বাতেলার যথাযথ উত্তর ও মুসলিম জনসাধারণকে সঠিক পথে দিক নির্দেশনা দিতে সক্ষম হও।

অন্যথা আইয়ামে জাহিলিয়্যাতের কাল আন্ধকারের ঘূর্ণিপাক তোমাদের ও সহজ সরল মুসলিম উম্মাহকে গ্রাস করে, ইসলাম থেকে অনেক দূরে সরে দিবে। এমনকি অর্থের লালসা দিয়ে ইসলামী তাহযীব ও তামাদ্দুন থেকে পদচ্যুত করতে সক্ষম হবে। অতএব, তোমাদেরকে বয়ান ও কলম দ্বারা, দরস ও তাদরীস দ্বারা তাদেরকে প্রতিহত ও উৎখাত করতে হবে।

হে আমার প্রাণ-প্রিয় ছাত্ররা!
মূলত: সব কার্যক্রম ও ইবাদত তাকওয়া অর্জনের মাধ্যমে হাসিল করতে হবে। তাকওয়া বলা হয় امتثال الأوامر والاجتناب عن النواهى অর্থাৎ আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের নির্দেশিত পথ অবলম্বন করা ও তাঁদের নিষেধকৃত পথ বর্জন করা। আর তা ইত্তেবায়ে সুন্নাত অনুযায়ী যথাযথ পালন করতে হবে। সুন্নাতে রাসূলের অনুসরণ ছাড়া কোন ইবাদতেরই বৈধতা হয় না এবং আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য হয় না এবং এর সাওয়াবও পাওয়া যায় না। আর এ তাকওয়া খাঁটি আল্লাহ ওয়ালাদের সংশ্রবে থেকে অর্জন করতে হয়। যেমন আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেছেন, ” وكونوا مع الصادقين ” অর্থাৎ খাঁটি আল্লাহ ওয়ালাদের সংশ্রবে থাক।

এ আয়াতের ব্যাখ্যা নির্ভরযোগ্য তাফসীর কারক আল্লামা মাহ্মুদ আলূসী বাগদাদী রহ. তাঁর তাফসীরে রুহুল মা‘আনী গ্রন্থে লেখেন-وخالطوهم حتى تكونوا مثلهم অর্থাৎ আল্লাহ ওয়ালাদের সাথে লেগে থাক। তাঁদের চলা-ফেরা, কথা-বার্তা, পারিবারিক জীবন, সামাজিক জীবন ও ইবাদত-বন্দেগী সব কিছুতেই ইত্তেবায়ে সুন্নাতের অনুকূলে তাঁদের মত বা তাঁদের রঙ্গে রঙ্গিন হয়ে যাও। যেমন- পানি, চিনি ও লেবুর শরবত একটি অপরটির সাথে একাকার হয়ে যায়। মোটকথা তাকওয়া, ইত্তেবায়ে সুন্নাতের অনুকূলে খাঁটি আল্লাহ্ ওয়ালাদের পথ প্রদর্শনে নিজের ও অন্যের জীবনকে গড়ে তুলতে হবে। তাহলে সাওয়াবের অধিকারী হবে। খাঁটি আল্লাহ্ ওয়ালার পরিচয় বিস্তারিত জানতে হযরত শাহ ওয়ালীউল্লাহ্ মুহাদ্দিসে দেহলবী রহ. এর কিতাব القول الجميل মুতালায়া কর।

হে আমার   স্নেহাষ্পদ ভাইয়েরা!
এ সবগুলোর মূল হল ইখলাস। অর্থাৎ তোমাদের সকল প্রকার কার্যাবলী পালন ইখলাসের মাধ্যমে করতে হবে। আর ইখলাস অর্থাৎ রেযায়ে মাওলা যা কিছু করবে মাওলাকে রাজী করার উদ্দেশ্যে করবে। রেযায়ে মাওলা ব্যতিরেকে ধন-সম্পদ, মান-সম্মান, নেতৃত্ব অর্জনও রিয়া বা কাউকে খুশি করার উদ্দেশ্যে কোন কাজ যদি করে থাক, তাহলে তা শিরকে খফীতে পরিণত হবে। আর আল্লাহ তা‘আলা তওবা ছাড়া শিরকের গুনাহ্ মাফ করেন না এবং এর সাওয়াব ও প্রতিদান থেকে পরকালে বঞ্চিত হবে।
রেযায়ে মাওলার অভাবের কারণে আমাদের মাঝে অধিকাংশ সময়ে ইখতেলাফ হয়ে থাকে। অতএব, তোমরা আদনা থেকে আদনা কাজ ও আমল রেযায়ে মাওলার সঙ্গে করবে।

হে আমার সৈনিক ছাত্ররা!
সর্বশেষে তোমাদের আমি নসীহত করছি, সব সময় ও সব হালতে গুনাহ্ থেকে বেঁচে থাকার আপ্রাণ চেষ্টা করবে। ভুলে কোন গুনাহ্ হলে সঙ্গে সঙ্গে তা থেকে তওবা করবে। আর দুটি জিনিসের হেফাযত করবে যেমন- রাষ্ট্র হেফাযত দুই জিনিসের মাধ্যমে হয়। একটি বর্ডার ও অপরটি রাজধানী। চক্ষু বর্ডার গার্ড স্বরূপ আর কলব রাজধানী স্বরূপ। এ দুটি জিনিসের হেফাযতের দ্বারাই গুনাহ্ থেকে হেফাযত হয়। গুনাহ্ থেকে বেঁচে থাকার সহজ উপায় হল দুটি। (১) হর হামেশা মওতের স্মরণ করা (২) কবরের মুরাকাবা করা।

হযরত ওমর ফারুক রা. তাঁর আংটির পাথরে লিখেছিলেন كفاك بالموت واعظا يا عمر অর্থাৎ হে ওমর! মওতের নসীহতই তোমার জন্য যথেষ্ট । আর কবরের মুরাকাবা প্রতিদিন ঘুমানোর পূর্বে করবে। নবী করীম সা. ইরশাদ করেন- কবর প্রতিদিন দুনিয়ার মানুষকে ডেকে বলে আমি মাটির ঘর, আমি একাকীর ঘর, আমি অন্ধকার ঘর, আমি সাপ-বিচ্ছুর ঘর। অতএব, কবরে যাওয়ার পূর্বেই আমরা এর প্রস্তুতি গ্রহণ করি।

পরিশেষে তোমাদের কাছে দু‘আ চেয়ে ও তোমাদের জন্য দু‘আ করে, উপরে উল্লিখিত নসীহতগুলোর উপর সর্ব প্রথম এই অধমকে, অতপর তোমাদেরকে এবং সকল ধর্মপ্রাণ মুসলমানগণকে আল্লাহ্ তা‘আলা আমল করার তাওফীক দান করুন। আমিন! ইয়া রাব্বাল আলামীন।

মুহতাযে দু‘আ
আব্দুল্লাহ্ গুফিরালাহু
খাদেমে জামিআ আরাবিয়া দারুল হিদায়াহ্,
পোরশা, নওগাঁ।

Scroll to Top