ইতিহাসঃ
আবদুল হাই শাহ নামক এক ব্যক্তি নিজে অর্থায়নে পোরশা উপজেলায় অনেকগুলো শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান স্থাপন করেছিলেন। তিনি পোরশা গ্রামে হাই মাদ্রাসা নামে একটি ইসলামি ধর্মীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন যা পরবর্তীতে ব্রিটিশ সরকার সরকারিভাবে আত্তীকরণ করে হাইস্কুলে পরিণত করেছিল।
১৯৪৬ সালে মৌলভি জাফর এবং তার বন্ধু হজরত একটি মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার উদ্যোগে নিয়েছিলেন। সেসময় আবদুল হাই শাহ, এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির জন্য অনেক পরিনাণ জায়গা ওয়াক্ফ করে দিয়েছিলেন। হাটহাজারী মাদ্রাসার তৎকালীন মুহতামিম আবদুল ওয়াহহাব এই মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা এবং পরিচালনার জন্য সালেহ আহমদকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন। সালেহ আহমদ, সেই ওয়াকফকৃত জমিতে জিল্লুর রহমান নামে এক ব্যক্তির অর্থায়নে একটি ভবন নির্মাণ করেছিলেন এবং তিনিই এই প্রতিষ্ঠানের প্রথম পরিচালক ছিলেন।
নোয়াখালী জেলার সাঈদ আহমদ (একজন শিক্ষক) দ্বারা প্রাথমিকভাবে কিছু ছাত্রকে নিয়ে প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করেছিলেন। পরবর্তীতে প্রতিষ্ঠানটির ভবন ও ওয়াকফকৃত জমির পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছিল এবং ১৯৫৯ সালে দাওরায়ে হাদিস বিভাগ চালু করা হয়েছিল। বাংলাদেশে উত্তরবঙ্গের সর্বপ্রথম এই মাদ্রাসাটিতেই ‘দাওরায়ে হাদিস’ বিভাগ চালু হয়েছিল এবং প্রথম ‘শায়খুল হাদিস’ হিসেবে দায়িত্বগ্রহণ করেছিলেন চট্টগ্রামের আবদুল হক ইসলামাবাদী। পরবর্তীতে মুফতি রেজাউল হক এই পদগ্রহণ করেন এবং ২০১২ সাল (প্রায় ৫০ বছর) পর্যন্ত এই প্রতিষ্ঠানে বুখারী শরিফের দরস (শিক্ষা) প্রদান করতেন।
অবস্থানঃ
রাজশাহী বিভাগের অন্তর্গত নওগাঁ জেলার পোরশা উপজেলার পোরশা গ্রামে প্রায় ৯ বিঘা স্থান জুড়ে এই প্রতিষ্ঠানটি অবস্থিত।
কার্যক্রমঃ
প্রতিষ্ঠানটির নিজস্ব তত্ত্বাবধানে প্রায় ১,৫০০ বিঘা ভূমি সম্পদ আছে এবং সমস্ত কার্যক্রম পরিচালনার জন্য বছরে প্রায় ২ কোটি টাকা ব্যয় হয়। ২০১৩ সালে প্রতিষ্ঠানটিতে শুধু আবাসিক ছাত্রই ছিল ১,১০০ জন।
প্রতিষ্ঠানটির নিজস্ব ভূমি থেকে প্রাপ্ত অর্থ ও এলাকার সর্বসাধারণের আর্থিক সহযোগিতায় মাদ্রাসার প্রায় ৫৭ জন শিক্ষক ও ১৮ জন কর্মচারীর বেতনভাতা এবং অন্যান্য ব্যয় বহন করা হয়।
বিভাগসমূহঃ
মোট ৮ টি বিভাগে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হয়। সেগুলো হল
১। নজরানা (মক্তব) বিভাগ
২। হিফজ খানা বিভাগ
৩। কের’আত খানা বিভাগ
৪। কিতাব খানা বিভাগ
৫। তাফসীর বিভাগ
৬। আদব বিভাগ
৭। উলূমুল হাদিস বিভাগ
৮। ইফ্তা বিভাগ
শিক্ষা বোর্ডঃ
১৯৯৮ সালে মাদ্রাসা শিক্ষার মানোন্নয়নের জন্য নওগাঁ এবং নওগাঁর পার্শ্ববর্তী এলাকার সকল কওমি মাদ্রাসা নিয়ে একটি মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড গঠন করা হয় যা ইত্তেফাকুল মাদারিস আল আরাবিয়া আল কওমিয়া, নওগাঁ, বাংলাদেশ নামে পরিচিত।
বোর্ডটির প্রধান কার্যালয় ছিল এই মাদ্রাসাটি। এই বোর্ডের আওতাভুক্ত মাদ্রাসাগুলো প্রধান কার্যালয়ে; মাদ্রাসা শিক্ষার মানোন্নয়ন, মাদ্রাসার সার্বিক উন্নতি ও ছাত্র-শিক্ষকদের সর্বপ্রকার সমস্যা নিয়ে আলোচনা করা হয়। এই বোর্ডের মাধ্যমে অধীন মাদ্রাসাগুলো নিয়মতান্ত্রিকভাবে পরিচালনাও করা হয়।